GoFundMe, GoGetFunding, FundRazr, Ketto এর মত অপরাজয় একটি পার্সোনাল ক্রাউডফান্ডিং ওয়েবসাইট। অপরাজয় ক্রাউডফান্ডিং হল এমন একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে মানুষ তার ব্যক্তিগত প্রয়োজন, জরুরী সমস্যা, কোন প্রকল্প বা উদ্যোগ কে বাস্তবায়ন করতে ইন্টারনেট এর সুবিধা ব্যবহার করে একটি বৃহৎ সংখ্যক মানুষের কাছ থেকে সামান্য কিছু কিছু করে অর্থ উত্তোলনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে থাকে । অপরাজয় ক্রাউডফান্ডিং আসলে মানব সেবা এবং অসহায়দের বিকল্প আর্থিক ব্যবস্থার একটি রূপ।
অপরাজয় ক্রাউডফান্ডিং এর ইতিহাস
অপরাজয় ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্মটি ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। অপরাজয় হলো দান-ভিত্তিক পিয়ার-টু-পিয়ার ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম। “আমরা মানবতায় বিশ্বাস করি” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে অপরাজয় কাজ করে যাচ্ছে দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত মেহনতি মানুষের জন্য। নানাবিধ প্রতিকূলতার কারনে বাংলাদেশে এখনও অপরাজয় ক্রাউডফান্ডিং এর বিস্তার লাভ করেনি। তবে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এর ব্যাপক প্রসার হবে বলে আশা করা যায়।
অপরাজয় কিভাবে কাজ করে ?
অপরাজয় হচ্ছে একটি ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্ম, যার মাধ্যমে আপনার সমস্যার কথা উপস্থাপন করে খুব সহজেই টাকা তুলতে পারবেন। অপরাজয় আপনাকে ডোনেশন কালেক্ট করে দিবে না বরং আপনার উত্তোলনকৃত টাকার নিরাপত্তা এবং সঠিক ভাবে আপনার কাছে পৌঁছে দেয়ার দ্বায়িত্ব অপরাজয়ের।
অনেকেই অপারাজয় প্লাটফর্ম ব্যবহার করে তাদের ইভেন্ট শেয়ার করছে তাদের বন্ধু এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে। আর বন্ধুরা শেয়ার করছে তাঁদের বন্ধুদের সাথে। আর এভাবেই একে অন্যের জন্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং টাকা উত্তোলনে সহযোগীতা করছে।
ক্রাউডফান্ডিং ক্ষেত্রসমূহ
সীমাহীন কারণ, অসীম সমস্যা, অপরাজয় ক্রাউডফান্ডিং এ আপনি ১০০+ ধরণের কারণ এর জন্য ক্যাম্পেইন করতে পারেন। আমরা বিশ্বাস করি যে একটি ভালো মানের অনলাইন ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম সবার জন্য উন্মুক্ত।
১। ক্যান্সার ক্রাউডফান্ডিং – যে কোনও ব্যক্তি বা পরিবারকে ব্যয়বহুল ক্যান্সারের চিকিৎসা এবং কেমোথেরাপির জন্য অনলাইনে ছোট ছোট আর্থিক অনুদানের সন্ধান করে দেয়াকে ক্যান্সার ক্রাউডফান্ডিং বলা হয়। ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যয় এবং কেমোথেরাপির ওষুধের জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য ক্রাউডফান্ডিং হ’ল সবচেয়ে সহজ উপায়। আপনি একটি পৃথক ক্যান্সার তহবিল সংগ্রহের প্রচারণা শুরু করতে পারেন বা একটি অলাভজনক যা ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য পরিষেবা দেয় তার জন্য তহবিল সংগ্রহ শুরু করতে পারেন।
২। মেডিকেল ক্রাউডফান্ডিং – ওপেন-হার্ট সার্জারি (Open Heart Surgeries), এনআইসিইউ যত্ন (NICU Care), অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন (Bone Marrow Transplant Surgery), লিভার সিরোসিস ( Liver Cirrhosis ), কিডনি বিকল ( Kidney Failure), মস্তিস্কের ক্ষতি ( Brain Injury ), ফুসফুসের রোগ ( Lung Disease ), বিরল রোগ (Rare Disease) সহ অন্য যে কোনও রোগের মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করার জন্য অনলাইন মেডিকেল ক্রাউডফান্ডিং একটি বিকল্প পদ্ধতি।
৩। বাচ্চাদের ক্রাউডফান্ডিং – তহবিলের অভাবের কারণে যে শিশুরা জীবনে দ্বিতীয় জীবন পেতে লড়াই করে, তাদের জীবন উপহার দিন। তাদের জীবন রক্ষায় চিকিৎসার খরচ বহন করতে তাদের পরিবারকে সহায়তা করুন। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ডেস্ক, বেঞ্চ এবং বই। একটি ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে সহায়তা করতে পারেন যাতে তাদের আগামী সম্ভাবনাগুলি কাজে লাগাতে পারে। পড়াশোনা, খেলা বা রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা প্রতিটি শিশুর প্রতিদিন তিনবেলা পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন। ক্ষুধা পেটে যেন তাদের ঘুমাতে না হয় সেই জন্য সহায়তা করুন। উদীয়মান ক্রীড়াবিদদের সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ এবং ভ্রমণের যত্ন নিয়ে তাদের লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করার জন্য বাচ্চাদের ক্রাউডফান্ডিং একটি বিকল্প পদ্ধতি।
৪। শিক্ষা ক্রাউডফান্ডিং – অনেক সময় দেখা যায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছে না, বই খাতা কিনতে পারছে না, উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নিতে পারছে না, গবেষনার জন্য টাকা পাচ্ছে না। এই সকল বিষয়ে তাদের লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করার জন্য অনলাইন শিক্ষা ক্রাউডফান্ডিং একটি বিকল্প পদ্ধতি।
৫। দুর্ঘটনা ক্রাউডফান্ডিং – হঠাৎ যে কেউ দুর্ঘটনায় পতিত হতে পারে। দুর্ঘটনাকালীন বা দুর্ঘটনা পরবর্তি সেই ব্যক্তির জীবন জীবিকা নির্বাহ করা দূরূহ হয়ে পড়ে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্ঘটনার কারনেও মানুষের ব্যবসা, বাড়ি ঘর, ফসল ইত্যাদি নানা সমস্যায় পড়তে পারে। এই সকল ব্যয়বহুল খরচ মিটাতে অনলাইন দুর্ঘটনা ক্রাউডফান্ডিং একটি বিকল্প পদ্ধতি।
৬। সামাজিক উদ্যোগ ক্রাউডফান্ডিং – মসজিদ, মন্দির, গির্জা নির্মাণ। সামাজিক বনায়ন, পাঠাগার নির্মাণ, পুল কালভার্ট ও রাস্তা মেরামত, আর্থিক অভাবগ্রস্ত মেয়েদের বিয়ে দেয়া ইত্যাদি বিষয়ে সহায়তা করার জন্য অনলাইন সামাজিক উদ্যোগ ক্রাউডফান্ডিং একটি বিকল্প পদ্ধতি।
৭। আত্ম কর্মসংস্থান ক্রাউডফান্ডিং - নিজেই নিজের কর্মের সংস্থান করাকে আত্ম-কর্মসংস্থান বলে। আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত ও লাভজনক ক্ষেত্র সমূহ হচ্ছে - হস্তচালিত তাঁত, মাদুর বা ম্যাট তৈরি, মৃৎশিল্প, বাঁশজাত দ্রব্য প্রস্তুতকরণ, লবণ উৎপাদন, টেইলারিং, পোশাক প্রস্তুতকরণ, মাছের জাল তৈরি, কাঠের আসবাব পত্র তৈরি, স্টিলের আসবাবপত্র তৈরি, মাটির বাসন প্রস্তুতকরণ, কামারের কাজ, সেরিকালচার, নৌকা তৈরি, মাছ শুকানো, গোল আলুর ময়দা তৈরি, পাটের ম্যাট তৈরি, আলুর চিপস তৈরি, গৃহস্থালীর দ্রব্যাদি তৈরি. বাইসাইকেল মেরামত, গবাদি পশু ও হাঁসমুরগির খামার, বেতের সামগ্রী তৈরি, কাঁচের তৈজসপত্র তৈরি, পাট তৈরি, পিতল ও কাঁসার দ্রব্যাদি প্রস্তুত, পাটের সৌখিন দ্রব্যাদি তৈরি, গেঞ্জি তৈরি, চামড়াজাত দ্রব্যাদি উৎপাদন, ঝিনুক দ্রব্যাদি প্রস্তুত, বেকারি, আটা ময়দা প্রস্তুত, ভোজ্য তেল উৎপাদন, খাদ্যজাত দ্রব্যাদি উৎপাদন, নিটিং দ্রব্য প্রস্তুত, এমব্রয়ডারি, সূতা কাটা, কাঠের খেলার সরঞ্জাম তৈরি, প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং ইত্যাদি করার জন্য ক্রাউডফান্ডিং করতে পারেন।
ক্যাম্পেইন করার উপায়
অপরাজয় ক্রাউডফান্ডিং সর্বসাধারণের জন্য সবসময় উন্মুক্ত এবং এখানে সব সময় ক্যাম্পেইন করা ফ্রি! যে কেউ তার কম্পিউটার বা মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করে এই প্ল্যাটফর্মে ক্যাম্পেইন করতে পারবে। ক্যাম্পেইন করার জন্য প্রয়োজন হবে ইন্টারনেট জ্ঞান এবং লেখার দক্ষতা।
১। রেজিস্ট্রশন করা – অপরাজয় ক্রাউডফান্ডিং ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সাইন আপ পেইজে আপনার নাম, মোবাইল, মেইল, জাতীয় পরিচয় পত্র এর নাম্বার দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করবেন।
২। মেইল ভেরিফাই করা – রেজিষ্ট্রেশন করার পর আপনার প্রদেয় মেইলে একটি ভেরিফাই মেইল যাবে সেখানে প্রবেশ করলে আপনি একটি লিংক দেখতে পাবেন ঐ লিংকে ক্লিক করলে আপনার আইডিটি ভেরিফাই হবে। বি:দ্র: ভেরিফাই মেইলটি ইনবক্সে না পেলে অবশ্যই আপনার স্প্যাম মেইলে চেক করে দেখবেন।
৩। প্রোফাইল সম্পূর্ণ করা – অপরাজয় একাউন্টে প্রবেশ করার পর আপনার প্রোফাইলের যাবতীয় তথ্য দিয়ে প্রোফাইলটি ১০০% স্বয়ংসম্পূর্ণ করবেন।
৪। ক্যাম্পেইন তৈরি করা – ক্রিয়েট ইউর ক্যাম্পেইন এই অপশনে গিয়ে ক্যাম্পেইন টাইটেল, সমস্যার বিস্তারিত, টাকার পরিমান, ক্যাম্পেইন এর শেষ তারিখ এবং ছবি দিয়ে ক্যাম্পেইনটি পোস্ট করবেন।
ক্যাম্পেইন যাচাই বাচাই করা
প্রাথমিক ভাবে দুই ধরনের ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয় অপরাজয় ক্রাউডফান্ডিং এর মধ্যে। প্রথমটি হলো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বা NGO এর জন্য ক্যাম্পেইন। দ্বিতীয়টি হলো ব্যক্তিগত সমস্যার কারনে ক্যাম্পেইন ।
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এর ক্যাম্পেইন যাচাই
১। সাধারণ সভার লিখিত মতামত দেখা হয় যেখানে উল্লেখ থাকবে যে তারা অপরাজয় ক্রাউডফান্ডিং এর মাধ্যমে তাহবিল সংগ্রহ করবে।
২। NGO এর বিগত ৩ বছরের আর্থিক বিবরণী।
৩। সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত পাসপোর্ট সাইজের ছবি-প্রতিটি ২ কপি
৪। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচী (কার্যক্রম বাস্তবায়ন পদ্ধতিসহ)
৫। সংস্থার নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবের বিবরণ (ম্যানেজারের প্রত্যয়ন পত্রসহ) ১ কপি
৬। সংস্থার কার্যালয়ের জমির দলিল/১৫০ টাকার ষ্টাম্পে ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি-১ কপি
৭। বাংলাদেশ এনজিও ব্যুরোর মাধ্যমে নিবন্ধন এর কপি
৮। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ডিপার্টমেন্ট অব সোশ্যাল সার্ভিসে নিবন্ধন এর কপি
৯। বাংলাদেশ রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মসে নিবন্ধন এর কপি
১০। সংস্থার অডিট রিপোর্ট
ব্যক্তিগত ক্যাম্পেইন যাচাই
যেহেতু আমাদের এখানে ৮০% হচ্ছে মেডিকেল ক্যাম্পেইন। তাই আমরা প্রধান কয়েকটা ক্যাটগরী চেক করি।
১। আমাদের ডেভেলপমেন্ট টিমকে আমরা সরাসরি হাসপাতালে পাঠাই। তারা ডাক্তার এর সাথে কথা বলে ক্যাম্পেইন ভেরিফাই করেন।
২। হাসপাতালের বিল যাচাই বাচাই করা হয়। এই ক্ষেত্রে আমরা ডাক্তার এবং হাসপাতাল এর সাথে কথা বলে নির্দিষ্ট বিলটাই প্রদানের ব্যবস্থা করি। যাতে কেউ অতিরিক্ত টাকা তুলতে না পারে।
৩। রোগীর পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড বিবেচনা করা হয়। অবশ্যই ক্রাউডফান্ডিং করা উচিত এমন পরিবারের ক্যাম্পেইন হলেই অপরাজয় ক্যাম্পেইন ভেরিফাই করেন।
৪। স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার/ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এর সুপারিশ পত্র-১ কপি প্রয়োজন হয়।
ক্যাম্পেইন প্রচার করা
অনেকেই মনে করেন একটি ক্যাম্পেইন করা মানেই কাজ শেষ। ক্যাম্পেইন করার পর তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়াটা অতি জরুরি। কিভাবে একটি ক্যাম্পেইন প্রচার করা হবে তা নিচে দেয়া হলো –
১। ফেসবুক – প্রচার প্রচারণার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সহজ মাধ্যম ফেইসবুক। আপনার ক্যাম্পেইনটি আপনার পরিচিত বন্ধু বান্ধবদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ফেইসবুক ব্যবহারের বিকল্প নেই। ফেইসবুক পেইজ, ফেইসবুক গ্রুপ, ফেইসবুক মেসেঞ্জার এবং ব্যক্তিগত আইডি থেকে প্রচার করতে পারেন। অপরাজয় ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম আপনার ক্যাম্পেইনটি অপরাজয় এর ফেইসবুক পেইজে প্রচার করবে। বিশেষ ক্ষেত্রে ক্যাম্পেইনটি অধিক মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য ফেইসবুক মার্কেটিং বা বুষ্ট করবে।
২। ইনস্টাগ্রাম – ফেইসবুকের পরেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ইনস্টাগ্রাম । ইনস্টাগ্রাম এর মাধ্যমে ক্যাম্পেইনটি প্রচার করলে এখান থেকেও ভালো সাড়া পাওয়া যাবে। তাই আপনার ক্যাম্পেইনটি ইনস্টাগ্রাম এর মাধ্যমে প্রচার করুন।
৩। হোয়াটস অ্যাপ – বর্তমানে বাংলাদেশে ছোট বড় ব্যবসায়িরা ব্যবসায়িক যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য হোয়াটস অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন। ক্যাম্পেইন এর লিংক হোয়াটস অ্যাপে শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার পরিচিতদের মধ্যে ক্যাম্পেইনটি প্রচার করতে পারেন। তাতে ব্যবসায়িদের থেকে আপনার ক্যাম্পেইনে অনুদান আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
৪। ইমো অ্যাপ – দেশের বাইরে বিদেশে আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধারা ইমো অ্যাপ ব্যবহার করেন। আর অনুদান প্রদান বা সাহায্য করার হার প্রবাসিদের বেশি। আপনার ক্যাম্পেইনটি ইমো অ্যাপে প্রচার করলে অধিক সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
৫। টুইটার – সেলিব্রেটি এবং উচ্চ পর্যায়ের লোকজন টুইটার ব্যবহার করে থাকেন। আপনার ক্যাম্পেইনটি আরো অধিক প্রচারের জন্য টুইটার ভালো ভূমিকা পালন করবে।
৬। লিংকডইন – কর্পোরেট দুনিয়ার সকল মানুষ লিংকডইন ব্যবহার করে থাকেন। আপনার ক্যাম্পেইনটি লিংকডইনে প্রচার করলে কর্পোরেট বেইজড মানুষ গুলো ক্যাম্পেইনটি সর্ম্পকে জানতে পারবে এবং ডোনেট করতে উৎসাহ পাবে।
অনুদানের সুষম বন্টন
আসিফ মধ্যবিত্ত, রবিন দরিদ্র, ফারুক উচ্চ মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। এরা কেউ কারো সাথে কোন ভাবে পরিচিত নয়। তারা তিনজন কিডনি রোগে আক্রান্ত। তাদের যথাক্রমে সবার ২০ লক্ষ টাকা করে মোট ৬০ লক্ষ টাকা চিকিৎসা খরচ প্রয়োজন। তিনজন ভিন্ন ভিন্ন ভাবে তাদের ফেইসবুকে পোস্টে করে ব্যাংক ও বিকাশ একাউন্ট এর মাধ্যমে সাহায্য চেয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় রবিন সংগ্রহ করল ৩০ লক্ষ টাকা, ফারুক ১৮ লক্ষ, আসিফ ১২ লক্ষ টাকা যথাক্রমে। কাঙ্খিত অর্থ না পাওয়ায় আসিফ এবং ফারুক এর চিকিৎিসা গ্রহনের সময় বিলম্বিত হল। আর এই সমস্যাটা দূর করতে অপরাজয় ফান্ডরেইজিং কাজ করছে। অপরাজয় ওয়েবসাইটে যখন রবিন এর ২০ লক্ষ টাকা সংগ্রহ সম্পন্ন হবে, তখন আর কেউ তাকে ডোনেট করতে পারবে না এভাইবেই সফটওয়্যার কাজ করে। তাই পরবর্তী ডোনার রা আসিফ এবং ফারুক কে ডোনেট করবে। ফলে তিন জনই অনুদানের সুষম বন্টন পেল এবং চিকিৎসা করাতে পারল সঠিক সময়ে।
ডোনেশন করার পদ্ধতি
অপরাজয় ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাফর্মটিতে ২টি ভিন্ন পেইমন্টে গেটওয়ে দেয়া আছে। একজন ডোনার ইচ্ছে করলে যে কোন একটি ব্যবহার করে ডোনেট করতে পারবেন। একজন ডোনার ডোনেট করার জন্য কি কি সুবিধা পাবে তা নিচে দেয়া হলো –
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা
১। Nexus Pay (ডাচ্-বাংলা ব্যাংক) – Nexus Pay এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
২। বিকাশ (ব্র্যাক ব্যাংক) – বিকাশ এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
৩। নগদ (ডাক বিভাগ) – নগদ এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
৪। রকেট (ডাচ্-বাংলা ব্যাংক) – রকেট এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
৫। Ok wallet (One Bank) – Ok wallet এর মাধ্যমে ঘরে বসেডোনেট করতে পারবেন।
৬। টি-ক্যাশ (ট্রাস্ট ব্যাংক) – টি-ক্যাশ এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
৭। কিউ-ক্যাশ (জনতা ব্যাংক) – কিউ-ক্যাশ এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
৮। Fast Cash (Eastern Bank) – Skybanking এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
৯। ইসলামিক ওয়ালেট (আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক) – ইসলামিক ওয়ালেট এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
১০। City Touch (city bank) – City Touch এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
১১। শিওর ক্যাশ (রূপালি ব্যাংক) – শিওর ক্যাশ এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
১২। ইউ পে (ইউসিবি ব্যাংক) – ইউ পে এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
১৩। ডি মানি (ফাইন্যান্স কোম্পানি) -ডি মানি এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
১৪। এম ক্যাশ (ইসলামী ব্যাংক) – এম ক্যাশ এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
১৫। মাই ক্যাশ (মার্কেন্টাইল ব্যাংক) – মাই ক্যাশ এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
১৬। BRAC IBanking (ব্র্যাক ব্যাংক) – ব্র্যাক আই ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
১৭। Bank Asia IBanking (ব্যাংক এশিয়া) – ব্যাংক এশিয়া আই ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
১৮। Islami Bank IBanking (ইসলামী ব্যাংক) – ইসলামী ব্যাংক আই ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
১৯। AB BANK IBanking (এবি ব্যাংক) – এবি ব্যাংক আই ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
২০। MPay (MTB) – MPay এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
২১। পি-মানি (প্রিমিয়ার ব্যাংক) – পি-মানি এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।এটিএম (স্ট্যান্ডার্ড চার্টার ব্যাংক) – এটিএম এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
২২। SEBL IBanking (Southeast Bank Ltd.) – সাউথইস্ট ব্যাংক আই ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
২৩। আইপে (মোবাইল ওয়ালেট) -আইপে এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
২৪। Tap n Pay (মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড) – Tap n Pay এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ড সেবা
১। ভিসা কার্ড – এখন যেকোনো ব্যাংকের ভিসা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড থেকে অপরাজয় এর ক্যাম্পেইনে ডোনেট করতে পারবেন।
২। মাস্টার কার্ড – বর্তমানে যেকোনো ব্যাংকের মাস্টার কার্ড থেকে অপরাজয় এর ক্যাম্পেইনে ডোনেট করতে পারবেন।
৩। আমেরিকান এক্সপ্রেস – যেকোনো আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড থেকে অপরাজয় এর ক্যাম্পেইনে ডোনেট করতে পারবেন।
৪। ইউনিয়ন পে – ইউনিয়ন পে এর মাধ্যমে ঘরে বসে ডোনেট করতে পারবেন।
মোট টাকার কত অংশ পাবে?
মেডিকেল ক্যাম্পেইন গুলো থেকে ১% আর বাকি যে কোন ধরনের ক্যাম্পেইন থেকে ৫% চার্জ কেটে বাকি অর্থ প্রদান করা হয়।
কারা ডোনেট করতে পারবেন
অনলাইন ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম অপরাজয় ক্রাউডফান্ডিং একটি অপেনসোর্স ক্রাউড ফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম। মোবাইল চালাতে পারে এমন যে কেউ, যে কোন বয়সের লোকজন এখানে ডোনেট করতে পারবে। ডোনেশন এর পরিমান উল্লেখ না থাকায় সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পরিমাণ ডোনেশন একজন ব্যক্তি দিতে পারবে।
ক্যাম্পেইন এর অনুদান প্রদান
একটি ক্যাম্পেইন সমাপ্ত হওয়ার পর ক্যাম্পেইন কারীকে তারা টাকা উত্তোলনের জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন করার সময় তার ব্যাংকের তথ্য যেমন ব্যাংকের নাম, রাউটিং নাম্বার, হিসাবের নাম, হিসাবের নম্বর, শাখা এই তথ্য গুলো দিতে হবে। অপরাজয় সেই ব্যাংকে অনুদানের সকল টাকা চেকের মাধ্যমে অথবা অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পরিশোধ করে দিবে।
ব্যাংকিং খাতে অপরাজয় এর ভূমিকা
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে ketto.org ২০১২ থেকে জুলাই ২০২০ সাল পর্যন্ত ১১ বিলিয়নেরও বেশি ডোনেশন উত্থাপিত হয়েছে, প্রায় ৫ লাখের বেশি দাতাদের সহায়তায় প্রায় দুই লক্ষ ক্যাম্পেইন প্রচার হয়েছে। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী, ক্রাউডফান্ডিং দ্বারা মোট ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করা হয়েছিল। এসব পরিসংখ্যান এর উপর নির্ভর করে বলা যায়। আমাদের দেশে অপরাজয় ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেনের হার প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে।
সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি
সামাজিক মূল্যবোধ হলো সমাজের ভিত্তি। সামাজিক মূল্যবোধ হচ্ছে সত্যবাদিতা, ন্যায়নীতি, শিষ্টাচার, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, সদাচরণ প্রভৃতি সুকুমার বৃত্তি বা মানবীয় গুণাবলির সমষ্টি। একজনের সমস্যা দেখা দিলে সবাই অনলাইনের মাধ্যমে একত্রিত হয়ে তার সমস্যাটি সমাধান করার মাধ্যমে সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি পাবে। এতে করে একটি ভালো এবং আধুনিক সমাজের বিবর্তন ঘটবে।
শিক্ষা খাতে অপরাজয় এর ভূমিকা
অর্থের অভাবে অনেকের পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। দরিদ্র হওয়ার কারণে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না। উচ্চ শিক্ষার জন্য ক্রাউডফান্ডিং করতে পারলে আমাদের দেশেও শিক্ষার হার অনেক গুণ বৃদ্ধি পাবে। ক্রাউডফান্ডিং করে গবেষণা বা ল্যাব এর খরচ মিটাতে পারলে নতুন নতুন আবিষ্কার এবং প্রযুক্তির দেখা পেতে পারে দেশের মানুষ। এই প্রযুক্তি গুলো খুব কম টাকায় মানুষের হাতে পৌঁছে যেতে পারবে। বিদেশে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ করে পড়াশোনা করছেন অনেক ছাত্র ছাত্রী ।
চিকিৎসা খাতে অপরাজয় এর ভূমিকা
ব্যয়বহুল চিকিৎসা গুলো করাতে গিয়ে আমাদের দেশের অনেকেই প্রায় নিঃশ্ব হয়ে যায়। পরবর্তি জেনারেশন তখন পথে নামার মত অবস্থা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একজন কর্মজীবি মানুষের উপর নির্ভর করেই আমাদের পরিবার গুলো টিকে থাকে। তাই তার অকাল মৃত্যু একটি প্রভাব ফেলে এই পরিবার গুলোর উপর। আর ক্রাউডফান্ডিং করে উন্নত চিকিৎসা সেবা পেয়ে কেউ নতুন ভাবে জীবন যাপন করতে পারলে সেই সমস্যা থেকে বের হওয়া সম্ভব।
সঠিক জায়গায় অনুদান যাওয়া
সারা দেশে অপরাজয় এর রয়েছে দক্ষ ভলান্টিয়ার। কোন একটি ক্যাম্পেইন ক্রিয়েট করার পর সেই ক্যাম্পেইনকে যাচাই বাছাই করা হয়। যাচাই বাছাই করার জন্য উক্ত এলাকার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেয়র, গ্রাম্য মেম্বার, কাউন্সিলরদের কাছ থেকে প্রত্যয়ন পত্র সংগ্রহ করা হয়। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেয়র, গ্রাম্য মেম্বার, কাউন্সিলরদের কল দেয়া হয়। ভলান্টিয়াররা সরাসরি ক্যাম্পেইন কারির কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করার কারণে এখানে রয়েছে স্বচ্ছতা। তাই যে কেউ খুব সহজে অনুদান প্রদান করতে পারেন অপরাজয় ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে।
ক্রাউডফান্ডিং ধারণাটি সারা বিশ্বে পুরোনো হলেও আমাদের দেশের মানুষের মাঝে এটা নতুন। প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ক্রাউডফান্ডিং এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। এই জন্য প্রয়োজন পরবর্তি প্রজন্মকে সঠিক প্রযুক্তিগত জ্ঞান প্রদান করা। আমরা আশাবাদি একদিন অপরাজয় ক্রাউডফান্ডিং থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন অর্থ উত্থাপিত হবে।